ক্যাসিনো মালিকের চেয়ে বড় বড় বিশ্ববিদ্যালয়ের নষ্ট ভিসি, দেশ ও ভবিষ্যৎ অনেক বেশি ক্ষতিকর

এই মুহূর্তে ঢাকা শহরের বিভিন্ন ক্লাবে অবৈধভাবে গড়ে উঠা ক্যাসিনোর বিরুদ্ধে অভিযান চলছে। ক্যাসিনো আর কি ক্ষতি করছে? দেশের ভিসিরা দেশের উচ্চ শিক্ষার যেই ক্ষতি করছে সেটা ক্যাসিনোর ক্ষতির চেয়ে মিলিয়ন গুন্ বেশি। দেশের প্রায় সবকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিদের বিরুদ্ধে নানারকম অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ শুনছি। হবে না কেন? ভিসিদের ক্ষমতা জানেন? বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত সেই একটি জায়গায়। এ যেন মৌমাছির রানী। ভিসির চারপাশ জুড়ে সবসময় একদল চাটুকার ঘুরঘুর ভনভন করে। সকল ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত হওয়ায় সরকারেরও লাভ। তার উদ্যেশ্য হাসিলের জন্য এই একজনকে হাতে রাখতে পারলেই কেল্লা ফতেহ। এই হাতে রাখতে পারার সব চেয়ে বড় অস্ত্র হলো জ্ঞান বুদ্ধিতে একজন কানা লুলা লেংড়া বিকলাঙ্গকে খুঁজে বের করে ওই পদে বসিয়ে দেওয়া। আমাদের সরকারগুলো ঠিক এই কাজটিই করে আসছে।

গুগল স্কলার কিংবা রিসার্চগেটে বাংলাদেশের ভিসিদের কোন ইনফরমেশন পাবেন? আর পেলেও সেটার এতই দৈন্যদশা হবে যে মনে হবে ধরণী দ্বিধা হয় না কেন? একজন ভিসি হবে প্রথমে একজন স্কলার। শিক্ষা গবেষণায় যার সুনাম আছে। তারপর দেখা হবে তার অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ যোগ্যতা। এই দুই যোগ্যতা commutable না। অর্থাৎ আগেরটা পরে আর পরেরটা আগে করা যাবে না।
তাছাড়া একজন ভিসিকে সকল ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দু বানানো যাবে না। কেন্দ্রবিন্দু বানালে সেইরকম মানুষকে ওই পদে বসাতে হবে যে পদের উচ্চতা থেকে বড়। সমস্যা হলো বাংলাদেশে এইরকম কেউ এখন নেই। তাই পদকে ছোট করে নিশ্চিত করতে হবে মানুষটি অন্তত পদের উচ্চতা থেকে বড়। এই মুহূর্তে বাংলাদেশের সকল ভিসি তাদের পদের ক্ষমতার উচ্চতা থেকে অনেক ছোট। ফলে এত ক্ষমতা কিভাবে ব্যবহার করতে হয় জানেনা। এত ক্ষমতা ধারণ করবার মত পাত্র তাদের নেই। এই mismatch যতদিন দূর না হবে ততদিন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সমস্যা থাকবেই।

আমাদের ভিসি নিয়োগেই সমস্যা। চারটি বড় ও পুরাতন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিসি নিয়োগ প্রক্রিয়া হলো নির্বাচন। আমরা কি এত দিনেও বুঝতে শিখিনি যে নির্বাচনের মাধ্যমে ভালো মানুষ অন্তত এই দেশে নির্বাচিত হয় না। আমরা নির্বাচন ব্যবস্থাটিকে কলুষিত করে ফেলেছি। ভিসি প্যানেল নির্বাচন হয় সিনেটে। তাই সিনেট সদস্য বানাতে ঢুকে গেছে রাজনীতি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শেষ যেই ভিসি প্যানেলটি করা হয় সেটি নিয়ে পত্র পত্রিকায় বিস্তর আলোচনা সমালোচনা হয়েছে। এইবার বুঝুন? যারা ভিসি হতে চান তাদের ঘিরে শুরু হয় কাঁদা ছোড়াছুড়ি। এর মাধ্যমে দেশের মানুষের কাছে কি বার্তা পৌঁছায়? এইসব কি আমাদের মানায়? এইগুলো করে করে দিন দিন আমাদের অবস্থানকে কেবল নিচে থেকে আরো নিচে নামাচ্ছি। তারই প্রতিফলন আমরা গোটা সমাজে দেখছি। প্রত্যেক সমস্যার একটি রুট কারণ থাকে। আমরা মূলে যাই না। সমস্যাকে নিশ্চিহ্ন করতে হলে সমস্যার কারণকে মেরামত করতে হবে। কিন্তু তার কোন লক্ষণ দেখছি না।

আমি আশা করি সরকার দ্রুত শিক্ষা ক্ষেত্রে একটি বৈপ্লবিক শুদ্ধি অভিযান চালাবে। সমস্যা এখন এত গভীর হয়েছে যে এটি থেকে মুক্ত হতে হলে বৈপ্লবিক শুদ্ধি অভিযান চালানো ছাড়া বিকল্প নেই। সকল অন্যায়কারীদের বিচারের আওতায় এনে উদাহরণ সৃষ্টি করতে হবে যে এই করিলে এই ফল হয়। সরকারের এই শুভ বুদ্ধির উদয়ের অপেক্ষায় রইলাম।

Maniruzzaman

I am Maniruzzaman, a free thinker and political commentator, dedicated to unraveling the complexities of Bangladesh’s political landscape.

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button