বন্ধ করুন সব অনিয়ম-দুর্নীতি

ভূমির দলিল নিবন্ধন সেবায় সীমাহীন অনিয়ম-দুর্নীতির বিষয়টি অনেকটাই ওপেন সিক্রেট। দেশের আইন অনুযায়ী কোনো জমি কেনার পর তার দলিল নিবন্ধন করতে হয়। কিন্তু বাধ্যতামূলক এ প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করতে গিয়ে অনিয়ম-দুর্নীতির কারণে সীমাহীন দুর্ভোগে পড়তে হয় নিবন্ধনের জন্য আসা মানুষদের। রেজিস্ট্রেশন বিভাগের নানা অনিয়ম-দুর্নীতি ও সমস্যা নিয়ে চার পর্বের প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে যুগান্তরে।

এসব প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ভূমি ব্যবস্থাপনায় আধুনিকায়নের উদ্যোগ কার্যত বাস্তবায়ন হয়নি এখনো। দুর্নীতি ও জাল-জালিয়াতির খপ্পর থেকে মুক্ত হতে পারেনি বেশিরভাগ সাবরেজিস্ট্রি অফিস। অধিকাংশ রেজিস্ট্রার, সাবরেজিস্ট্রার এবং অন্যান্য কর্মচারীর বিরুদ্ধে রয়েছে ভূরিভূরি অভিযোগ। দেখা যায়, এদের পদ-পদাবি ছোট হলেও অবৈধ আয়-রোজগার অনেক। এতে বোঝা যায় এসব অফিসে দুর্নীতি কতটা ব্যাপক।

প্রতিবেদনে উঠে এসেছে সাবরেজিস্ট্রি অফিসে ভ্যাট চালান ও পে-অর্ডার নিয়ে বড় ধরনের জালিয়াতির তথ্য। বাস্তবের চেয়ে বেশি খরচ দেখিয়ে অতিরিক্ত ভ্যাট চালান ও পে-অর্ডার করা হয়। দলিল নিবন্ধন সম্পন্ন হওয়ার পর জালিয়াত চক্র বাড়তি অর্থ বিশেষ কৌশলে নগদায়ন করে পকেটস্থ করে। এ প্রক্রিয়ার সঙ্গে ব্যাংকের কিছু অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারী জড়িত বলেও জানা যায়।

আশা করা গিয়েছিল, ভূমি ব্যবস্থাপনা ডিজিটাল হলে এ খাতে দুর্নীতি এবং সেবাপ্রার্থীদের ভোগান্তি কমবে। দেশে ই-রেজিস্ট্রেশন তথা ডিজিটাল পদ্ধতিতে জমি রেজিস্ট্রির কাজ পরীক্ষামূলকভাবে শুরু হলেও তা প্রকৃতপক্ষে আলোর মুখ দেখেনি। সাবরেজিস্ট্রি অফিসে দুর্নীতির উৎস নিয়ে ২০২০-২১ সালের দ্বিবার্ষিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল দুর্নীতি দমন কমিশন, যেখানে বিতর্কিত জমি রেজিস্ট্রেশন বন্ধে সাবরেজিস্ট্রি অফিসে ‘রেকর্ড অব রাইটস’ পরীক্ষা করে রেজিস্ট্রেশনের সুপারিশ করা হয়। এ ছাড়া দলিল রেজিস্ট্রির সময় নেওয়া পে-অর্ডার, ব্যাংক ড্রাফট ও চেক নির্ধারিত সময়ে জমা করা, রেজিস্ট্রেশন ম্যানুয়াল অনুযায়ী ক্যাশ ট্রান্সফার রিপোর্ট (সিটিআর) নিয়মিতভাবে ব্যাংকের সঙ্গে মিলিয়ে সংরক্ষণ করার কথা বলা হলেও বাস্তবে তা হচ্ছে না। দুদকের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছিল, সাবরেজিস্ট্রি অফিসগুলোতে বিপুলসংখ্যক নকলনবিশ থাকলেও প্রতিদিন যে পরিমাণ দলিল রেজিস্ট্রি হয়, তা ভলিউমে কপি করা হয় না। ফলে সার্টিফায়েড দলিলের কপি পেতে সেবাগ্রহীতারা দালালের শরণাপন্ন হন এবং দ্রুত সেবা পাওয়ার জন্য তাদের উৎকোচ দিতে বাধ্য হন। এসব অনিয়মের পাশাপাশি এ খাতে নানা সমস্যাও রয়েছে। রয়েছে আইনি জটিলতা। তাই রেজিস্ট্রেশন বিভাগকে যুগোপযোগী করতে প্রয়োজনীয় সংস্কার আনা দরকার বলে মনে করি আমরা। এ লক্ষ্যে অন্তবর্তী সরকার কার্যকর পদক্ষেপ নেবে, এটাই কাম্য।

Maniruzzaman

I am Maniruzzaman, a free thinker and political commentator, dedicated to unraveling the complexities of Bangladesh’s political landscape.

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button