সবাইকে জবাবদিহিতার আওতায় আনতে হবে
‘যত বড় যে-ই হোক, চোরকে চোর বলতে হবে’—জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব মো. মোখলেস উর রহমানের এই কথা সম্ভবত কথার কথা না। কারণ, তাঁর এই কথার পেছনে যে প্রেক্ষাপট দেখা যাচ্ছে, তাতে বোঝা যাচ্ছে, সরকারি দপ্তরগুলোকে চুরিমুক্ত করার বিষয়ে সরকারের অবস্থান খুবই কড়া।
জনপ্রশাসনের জ্যেষ্ঠ সচিব সম্প্রতি বলেছেন, ‘সব সরকারি চাকরিজীবীকে সম্পদের হিসাব দিতে হবে। সোজা কথা, জমা না দিলে আইনানুগ খবর আছে।’
‘জনপ্রতিনিধিদের সম্পত্তির হিসাব দিতে হবে’ কিংবা ‘সরকারি চাকরিজীবীদের সম্পত্তির হিসাব দিতে হবে’—এসব কথা নতুন কিছু না।
বিশেষ করে নতুন সরকার এলে এই ধরনের একটা ঘোষণা দেওয়ার এবং কিছুদিনের মধ্যে যথারীতি সেই ঘোষণা ভুলে যাওয়ার রেওয়াজ এ দেশে আছে।
কিন্তু এবারের পরিস্থিতি ভিন্ন। এবারের ঘোষণাটিও ভিন্ন। জ্যেষ্ঠ সচিবের ঘোষণার সবচেয়ে আকর্ষণীয় দিক হলো, ‘চোরকে চোর বলতে হবে’।
কাজটি সহজ না। কাজটি কঠিন। কারণ, চোরকে চোর বলতে আমরা ভুলতে বসেছি।
সিঁধ কেটে চুরির দিন অস্ত গেছে। তার সঙ্গে সিঁধেল চুরির মতো একটা ঐতিহ্যবাহী কুটিরশিল্পের মৃত্যু ঘটেছে। চৌর্যবৃত্তির আধুনিকায়নে চোরের মা ও বড়গলাসংক্রান্ত বিখ্যাত বাগ্ধারাটিও তার যৌবন হারাচ্ছে।
এখন ভূরি ভূরি চুরির ঘটনা আছে, কিন্তু চোর নেই। আমি-তুমি-সে—সবাই জানে, অমুক লোকের গাড়ি-বাড়ি সব চুরির টাকায়, কিন্তু কেউ তাকে চোর বলছে না।
সবাই জানে, নিতান্ত গরিব ঘরে বেড়ে ওঠা অমুক সাহেব একটা সরকারি চাকরি করেন; মাস গেলে সব মিলিয়ে ষাট-সত্তর হাজার টাকার বেশি বেতন পান না; এই চাকরির বাইরে তাঁর কামাই রোজগারের উৎসও নেই।
সেই তিনি চাকরিতে ঢুকেই চার-পাঁচ হাজার টাকায় পাঁচ কেজি সাইজের নদীর পাঙাশ কিনে বাড়ি ফেরেন, বউ–ছেলেমেয়ে নিয়ে হিল্লিদিল্লি বেড়াতে যান, চাকরির পাঁচ বছরের মধ্যে প্লট কেনেন, ফ্ল্যাট কেনেন, গ্রামের বাড়িতে আলিশান দালান তোলেন।
এসব কেমন করে তিনি করেন, তা সবাই বোঝে। সবাই জানে, ‘ভদ্র’লোকটি সর্বার্থে একজন ‘পাকা চোর অতিশয়’।