সীমা লঙ্ঘন কখনো শুভ হয় না
সীমা লঙ্ঘন বা বাড়াবাড়ি করা মোটেও কাম্য নহে। কেননা ইহার পরিণাম কখনো শুভ হয় না। কাহারো প্রতি কথাবার্তায় বা আচার-আচরণে অন্যায়, জুলুম বা নির্যাতন করা এমনকি তুচ্ছতাচ্ছিল্য করা সীমা লঙ্ঘনের মধ্যেই পড়ে। হিংসাবিদ্বেষ বা অহংকার করাও সীমা লঙ্ঘনের শামিল। মানুষ যখন অর্থকড়ি বা ক্ষমতার দম্ভে আত্মহারা হইয়া যায়, তখন তাহার পক্ষে যে কোনো অন্যায়-অপকর্ম করা কঠিন হয় না। নিজের সীমা-পরিসীমা সম্পর্কে তখন সে হইয়া পড়ে বেহুঁশ বা অসচেতন। এমনকি ভালো কাজেও বাড়াবাড়ির কারণে তাহা প্রশ্নবিদ্ধ হয় বা হইতে পারে। তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলিতে পারসোন্যালিটি কাল্ট বা ব্যক্তিপূজার যে মারাত্মক ব্যাধি দেখা দিয়াছে, তাহার কারণেও শিল্প-সংস্কৃতি, অর্থনীতি, সমাজনীতি ও রাজনীতিতে দেখা যায় বিপর্যয়। একজন মহান ও সর্বজনশ্রদ্ধেয় ব্যক্তিও ইহার কারণে পড়িতে পারেন ইমেজ-সংকটে। ইহাতে জনগণের বিরক্তি তৈরি হয় এবং সেই সুমহান ব্যক্তিত্বের মর্যাদা বাড়ে না, বরং তাহার প্রতি সুবিচার করা হয় না।
কথায় বলে, ‘অতি ভক্তি চোরের লক্ষণ’। ব্যক্তিবিশেষের প্রতি অতিমাত্রায় ভক্তি ও শ্রদ্ধা প্রকাশ একসময় হিতে বিপরীত হইয়া দাঁড়ায়। আমরা জানি, সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের মূলে ইহা ছিল অন্যতম অনুঘটক। অর্থাৎ শুধু অত্যাচার-নির্যাতনের মাধ্যমেই যে সীমা লঙ্ঘন হয়, তাহা নহে। এই অযাচিত ভক্তিবাদও ইহার জন্য দায়ী। বিশেষত, ১৯৭৪ সালের দিকে সমগ্র সোভিয়েত ইউনিয়ন যেন ভুগিতেছিল ব্রেজনেভ ম্যানিয়ায়। তাহার ছবি প্রতিদিন টেলিভিশনের পর্দায় দেখা যাইত। মাস্টারদের ক্লাস তাহার বন্দনা ছাড়া শুরু করা যাইত না। থিসিসের প্রথম অধ্যায়ে তাহার বাণীর উপস্থিতি ছিল বাধ্যতামূলক। এখনো তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলিতে আমরা এই ধরনের বাড়াবাড়ি বা সীমা লঙ্ঘন দেখিতে পাই। ইহার মাধ্যমে ঘুষ, দুর্নীতি, কালোবাজারি, অর্থপাচার, ব্যাংক লোপাট ইত্যাদি অপকর্ম জায়েজ করিবার অপচেষ্টা চলে। আবার ইহার মাধ্যমেই তৈরি হয় স্বৈরতন্ত্র, একনায়কতন্ত্র বা কর্তৃত্ববাদ। যাহার কারণে কোর্ট-কাচারি ও অফিস-আদালত হইতে শুরু করিয়া সর্বত্র জনগণের দুর্ভোগ ও হয়রানি বাড়ে। হত্যা, গুম, খুন, মিথ্যা ও সাজানো মামলা ইত্যাদি বাড়িতে থাকে। ইহাতে দেখা দেয় নিরপরাধ মানুষের আহাজারি। জীবনের এই দুঃসহ অভিজ্ঞতা হইতেই একসময় উঠিয়া আসে প্রতিবাদের ভাষা। তখন দেশে দেশে দেখা দেয় বিশৃঙ্খলা, ভাঙচুর, গোলযোগ-গোলমাল, রক্তপাত ইত্যাদি।