পদক্ষেপ নিন পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনতে।
বিগত সরকারের আমলে দেশ থেকে নানাভাবে অর্থ পাচারের ঘটনা বহুল আলোচিত। আশার কথা, অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর পাচারকৃত অর্থ ফেরত আনতে নানা উদ্যোগ নিয়েছে। নির্ধারিত প্রক্রিয়ার মাধ্যমে পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনা সময়সাপেক্ষ হওয়ায় প্রয়োজনে পাচারকারীদের সঙ্গে আপসের মাধ্যমে ফেরত আনার চেষ্টা করা হবে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর।
শুক্রবার বাংলাদেশ ব্যাংকের চট্টগ্রাম কার্যালয়ে ‘অর্থ পাচার প্রতিরোধ ও সমসাময়িক ব্যাংকিং’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় তিনি আরও বলেছেন, পৃথিবীর সব দেশেই ‘আউট অব কোর্ট সেটেলমেন্ট’ বলে একটা কথা আছে। অর্থাৎ আইনি প্রক্রিয়ার বাইরে গিয়ে কিছু উদ্যোগ নেওয়া হয়ে থাকে। তিনি জানান, আপসের মাধ্যমে হলে অনেক সময় পাচার হওয়া অর্থ দ্রুত ফেরত আনা যায়। তবে সবার আগে দেশ থেকে কোন দেশে কী পরিমাণ অর্থসম্পদ পাচার হয়েছে, তার বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহের ওপর জোর দেন তিনি। জানান, এজন্য কিছু বেসরকারি ফার্মের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে।
বস্তুত, অর্থ পাচার নিয়ে অতীতে অনেক আলোচনা হলেও বাস্তবে পাচার রোধ কিংবা অর্থ ফেরত আনার বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে আমরা দেখিনি। শুধু তাই নয়, রক্ষক হয়ে ভক্ষকের ভূমিকা পালনের খবরও অতীতে বেরিয়েছে। রাজনৈতিক পালাবদলের এ প্রেক্ষাপটে কেউ যাতে অর্থ তুলে নিয়ে পালিয়ে যেতে না পারে, তা প্রতিরোধে সন্দেহভাজনদের ব্যাংক হিসাব জব্দকরণসহ বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি ছিল। পরিতাপের বিষয়, সার্বিকভাবে তা হতে আমরা দেখিনি।এছাড়া এখন পর্যন্ত পাচারকৃত টাকার প্রকৃত পরিমাণও জানা সম্ভব হয়নি। বলার অপেক্ষা রাখে না, পাচারকৃত অর্থ ফেরত আনা সময়সাপেক্ষ ও বিধিবিধান অনুসরণের বিষয়। তা করতে গেলে স্বাভাবিকভাবেই সময়ক্ষেপণের সুযোগ নেই। আর তাই কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান যত ক্ষমতাশালীই হোক না কেন, সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকলে তাকে আইনের আওতায় আনার বিষয়ে গুরুত্ব দিতে হবে। যেসব প্রক্রিয়ায় অর্থ পাচার হয়ে থাকে, সেগুলো চিহ্নিত করে এর ফাঁকফোকরগুলো বন্ধ করাও প্রয়োজন। সব ধরনের আর্থিক লেনদেনের ক্ষেত্রে শতভাগ স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা যাতে নিশ্চিত হয়, সেদিকেও নজর দিতে হবে। যেহেতু অর্থ পাচারের সঙ্গে হুন্ডির বিষয়টি সরাসরি জড়িত, সেহেতু এটি বন্ধেও নিতে হবে পদক্ষেপ।