বিশ্ববিদ্যালয় দুর্নীতি
জনৈক মন্ত্রী মহোদয় ঘোষনা দিয়েছেন দেশের ৬৪ জেলায় ৬৪ টি বিশ্ববিদ্যালয় হবে। খুব খুশির সংবাদ।যত বেশি বিশ্ববিদ্যালয় হবে দেশ তত উন্নত হবে। কিন্তু আমাদের “বিশ্ববিদ্যালয়” কি আসলেই “বিশ্ববিদ্যালয়” নাকি তামাশা করে এ নামে ডাকা হয়?
.
এদেশের ছেলেমেয়েরা কি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আদৌ কিছু শিখছে? দেশ জাতির জন্য অবদান রাখার মতো মানুষ কি তৈরী হচ্ছে? নাকি শুধু পরীক্ষায় পাশ করার জন্য দুয়েকটা শিট মুখস্থ করছে? সারা পৃথিবীর বিশ্ববিদ্যালয় পাশ করা ছেলেমেয়েরা অবদান রাখতে পারলে, বাংলাদেশীরা পারছে না কেন?
.
আসুন দেখি, সমস্যাটা কোথায়? পৃথিবীর কোন একটা বিশ্ববিদ্যালয়ও কি পাবেন, যেখানে ছাত্ররা সকাল সন্ধ্যা ছাড়পোকার কামড় খায়? হুঁ, আছে, বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টুডেন্টরা ছারপোকার কামড় খায়। ইতর প্রাণীর মতো গণরুমে ১০/১২ জন গাদাগাদি করে থাকে। দুর্গন্ধের কারনে টয়লেটে যাওয়ার সময় নাকে রুমাল বেধে যেতে হয়!
এরা শেখার জন্য পড়বে কখন? বিদ্যার্জন করবে কিভাবে? পড়ে পাশ করে, এটাই তো অনেক বড় পাওয়া!
.
বিশ্ববিদ্যালয়ের হলের খাবারের মান বস্তির রিকশাওয়ালাদের চেয়ে নিম্নমানের। এক বাটি ঝোলের মধ্যে লবন মরিচবিহীন আধা টুকরা ফার্মের মুরগির মাংস খেয়েও ছাত্ররা বেঁচে আছে।এটাই তো শুকরিয়া! এদের কাছ থেকে আপনি যদি আশা করেন, দেশের কথা চিন্তা করবে, জ্ঞান বিজ্ঞানের কথা চিন্তা করবে, তাহলে আপনার চেয়ে বড় বোকা আর কে হতে পারে? সারাদিন ঘাসবিহীন মাঠে গরু বেধে রাখলেন, সন্ধ্যায় গরুটা দুধ না দিয়ে লাথি দিবে এটাই প্রত্যাশিত!
.
বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া বোধহয় বিরাট কোন অপরাধ! তাই তাদের এই দন্ড। বিদেশের জেলখানার খাবারের মানও অনেক ভালো। কয়েদীদের জীবন মানও এদেশের ভার্সিটির ছেলেমেয়েদের চেয়ে অনেক উন্নত।
.
প্রভোস্ট নামে একটা পদ আছে। আমার জানা নেই উনার ডিউটি কি! মাসে কয়বার তিনি হলে যান? কোনদিন কি খোঁজ নেন, আমার ছাত্ররা কী অবস্থায় আছে, কি করছে?
আর ভিসি হুজুর! উনি থাকেন বাংলো বাড়িতে। থাকবেনই তো। কষ্ট করে পড়াশোনা করেছেন, তারপর সরকারি দলের দালালি করে পদ বাগিয়েছেন, শেষ বয়সে আরাম না করলে চলে? সরকারি কলেজের প্রিন্সিপাল সাহেবের একই অবস্থা। থাকেন আরাম করেন। কিন্তু তার ছাত্ররা যে গরু ছাগলের মতো জীবন যাপন করে, এ নিয়ে তাদের কোন টেনশন নেই।
.
.বিশ্ববিদ্যালয় পাশ করে ছাত্ররা বেরিয়ে যান। অর্থনীতি বুঝেন না। বিজ্ঞান বুঝেন না, ধর্ম বুঝেন না, দর্শন বুঝেন না। দেশ সামনে যাবে কি করে? সেকুলার শিক্ষা ব্যাবস্থায় দুর্নীতি থাকবে, এটাই স্বাভাবিক! কিন্তু অজ্ঞতা দুর্নীতির চেয়েও বড় সমস্যা।
.
আমরা জানি, এদেশটা গরীব। এক বারে হয়ত সব সমস্যা সমাধানও সম্ভব না। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের “মানুষ”এর মতো করে বাঁচার সুযোগ করে দিতে নিশ্চয় হাজার কোটি টাকা লাগবে না। জাতির উন্নতির জন্যই এদের মানুষের মতো জীবন যাপন দরকার।
.
আর নতুন কয়েকটা বিল্ডিং বানিয়ে “বিশ্ববিদ্যালয়” নাম দিয়ে তামাশা করার চেয়ে পুরোনো গুলো ঠিক করাটাই কি জরুরি নয়? হাজার হাজার সার্টিফিকেট ওয়ালা বলদ বানানোর চেয়ে কয়েকটা মানুষ বানানোই কি উত্তম নয়?