আওয়ামীমন্ত্রী মানেই যেভাবে ইচ্ছা দুর্নীতি করা যায়?
সমাজকল্যাণমন্ত্রী হওয়ার পর রাজধানীর বেইলি রোডে মিনিস্টার্স অ্যাপার্টমেন্টে পাঁচ হাজার বর্গফুটের একটি ফ্ল্যাট পেয়েছিলেন নুরুজ্জামান আহমেদ। এর বাইরেও তিনি সমান আয়তনের আরেকটি সরকারি বাসা নিজের দখলে রাখেন। গত পাঁচ বছর বাসা দুটির একটিতে তিনি নিজে, অন্যটিতে তাঁর আত্মীয়স্বজন বসবাস করেন।
‘দ্য মিনিস্টার্স, মিনিস্টার্স অব স্টেট অ্যান্ড ডেপুটি মিনিস্টার্স অ্যাক্ট’-এ বলা আছে, একজন মন্ত্রী সরকারি ব্যয়ে বিনা ভাড়ায় একটি সুসজ্জিত বাসভবন পাবেন। কিন্তু নুরুজ্জামান আহমেদ নিয়ম লঙ্ঘন করে দুটি বাসা দখলে রাখেন বলে সরকারি আবাসন পরিদপ্তরের সূত্র থেকে জানা যায়। কিন্তু এ নিয়ে গত পাঁচ বছর কিছু বলার সাহস পাননি আবাসন পরিদপ্তরের কর্মকর্তারা।
মিনিস্টার্স অ্যাপার্টমেন্টে উনি (নুরুজ্জামান আহমেদ) দুটি বাসা নিয়েছেন। একটাতে তিনি থাকতেন, আরেকটিতে ওনার কেউ থাকতেন। বিষয়টি আমি গত সপ্তাহে জানতে পেরেছি।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর ১১ জানুয়ারি নতুন মন্ত্রিসভা গঠিত হয়। এরপর নতুন মন্ত্রীদের বাসা বরাদ্দ দিতে গিয়ে গণপূর্ত মন্ত্রণালয় মন্ত্রীদের বাড়ির হালনাগাদ তালিকা করে। তাতে সাবেক সমাজকল্যাণমন্ত্রীর নিয়ন্ত্রণে দুটি সরকারি বাসা থাকার বিষয়টি সামনে আসে।
গতকাল শনিবার এই প্রতিবেদক বেইলি রোডে অবস্থিত মিনিস্টার্স অ্যাপার্টমেন্টে যান। সেখানে একই চত্বরে তিনটি ভবন রয়েছে। প্রতিটি ভবন ছয়তলা করে। এর মধ্যে ১ নম্বর ভবনের ছয়তলার পশ্চিম পাশের বাসায় থাকেন নুরুজ্জামান আহমেদ। ২০১৯ সালে সমাজকল্যাণমন্ত্রী হওয়ার পর তিনি এই বাসায় ওঠেন। এখনো তিনি আছেন। এবার মন্ত্রী না হলেও নিয়মানুযায়ী এক মাস থাকতে পারেন।
এরপর ৩ নম্বর ভবনে গিয়ে জানা যায়, ওই ভবনের পঞ্চম তলার পূর্ব পাশের ৫ হাজার বর্গফুটের বাসাটিও নুরুজ্জামানের নামে রয়েছে। সেখানে তিনি থাকতেন না। তাঁর আত্মীয়স্বজন সেখানে বসবাস করতেন বলে নিরাপত্তাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়।
মিনিস্টার্স অ্যাপার্টমেন্টের পাশে থাকেন, এমন আরেকজন মন্ত্রীর কাছে জানতে চাইলে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, নুরুজ্জামান আহমেদ যে দুটি বাসা ব্যবহার করেন, সেটা অন্য বাসিন্দারাও জানেন।
এ বিষয়ে নুরুজ্জামান আহমেদের বক্তব্য জানতে তাঁকে বেশ কয়েকবার ফোন দেওয়া হয়। মুঠোফোনে খুদে বার্তা (এসএমএস) পাঠিয়েও বক্তব্য চাওয়া হয়। কিন্তু তিনি সাড়া দেননি।
এ নিয়ে পরে যোগাযোগ করা হয় গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব কাজী ওয়াছি উদ্দিনের সঙ্গে। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘মিনিস্টার্স অ্যাপার্টমেন্টে উনি (নুরুজ্জামান আহমেদ) দুটি বাসা নিয়েছেন। একটাতে তিনি থাকতেন, আরেকটিতে ওনার কেউ থাকতেন। বিষয়টি আমি গত সপ্তাহে জানতে পেরেছি।’
সচিব জানান, বিষয়টি তিনি জানার পর অপর বাসাটির চাবি সাবেক মন্ত্রীর কাছ থেকে নিয়ে নেওয়া হয়েছে। বাসাটি এখন খালি। এ ছাড়া নুরুজ্জামান আহমেদ যেটিতে থাকতেন, সেটিতে এখনো আছেন তিনি।
এরপর ৩ নম্বর ভবনে গিয়ে জানা যায়, ওই ভবনের পঞ্চম তলার পূর্ব পাশের ৫ হাজার বর্গফুটের বাসাটিও নুরুজ্জামানের নামে রয়েছে। সেখানে তিনি থাকতেন না।
সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার প্রথম আলোকে বলেন, ক্ষমতার অপব্যবহার করে একজন মন্ত্রী পাওনাবহির্ভূত একটি বাসা দখলে রাখলে সেটা দুর্নীতির শামিল। যত দিন ওই বাসা দখলে ছিল, তত দিনের বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানিসহ অন্যান্য খরচ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীর কাছ থেকে আদায় করতে হবে। পাশাপাশি যাঁরা সরকারি এসব বাসা তদারক করেন, তাঁদেরও দায় নিতে হবে।
নুরুজ্জামান আহমেদ ২০১৬ সালের ১৯ জুন সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী হন। ২০১৯ সালে তিনি একই মন্ত্রণালয়ের পূর্ণ মন্ত্রী হন। সমাজকল্যাণমন্ত্রী হওয়ার পর থেকে পুরো সময়জুড়ে আলোচনা-সমালোচনা ছিল নুরুজ্জামান আহমেদকে নিয়ে। ক্ষমতার অপব্যবহার করে জনগণের করের টাকায় নিজের মায়ের নামে হাসপাতাল করেছেন।
নিজের গ্রামের বাড়ির ৯ লাখ টাকা বিদ্যুৎ বিল বকেয়া রেখেছিলেন, গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশের পর সেই বিল পরিশোধ করেন। নিজ মন্ত্রণালয়ের অধীন বিভিন্ন ভাতা ও অনুদান দেওয়ার ক্ষেত্রেও স্বজনপ্রীতির কারণে সমালোচনার মুখে পড়েছিলেন তিনি। এবার দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে লালমনিরহাট-২ (আদিতমারী-কালীগঞ্জ) আসন থেকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে সংসদ সদস্য হলেও তাঁকে আর মন্ত্রী করা হয়নি।