বাংলাদেশে দূর্নীতির সমস্যা: পর্বঃ ১
বাংলাদেশের মত তৃতীয় বিশ্বের রাষ্ট্রগুলোর রাষ্ট্রীয় খাতে দূর্নীতি একটি বহুল আলোচিত বিষয়। যে সমাজে দূর্নীতি ব্যাপক, সে সমাজে দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে টিকে থাকার জন্য সরকারি সেবার দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তার তৈরি করা দূর্নীতি প্রক্রিয়ায় ঘুষ দিয়ে বা আত্ম-মর্যাদার কিছুটা বিসর্জন দিয়ে হলেও জীবিকার ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে বাধ্য হতে হয়। দূর্নীতিগ্রস্ত সরকারি কর্মকর্তা সব সময় দূর্নীতির একক উপভোগী হয় না। একেক মন্ত্রণালয়ে আলাদা আলাদা কাজ থাকায় আলাদা আলাদা ব্যক্তিদের সন্তুষ্ট করার যে চেইন চলমান সেটা দূর্নীতিকে প্রসারিত করছে।
বার্লিনভিত্তিক ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের করাপশন পারসেপশন ইনডেক্স এবং বিশ্বব্যাংকের দূর্নীতি নিয়ন্ত্রণ উভয় সূচকেই বাংলাদেশকে বিশ্বের অন্যতম দুর্নীতিপ্রবণ দেশ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছিল। জরিপে দেখা যায়, সবচেয়ে বেশি দূর্নীতি হয় বিচার বিভাগে,জরিপ করা পরিবার গুলোর মধ্যে দেখা যায় ৮৮ % মানুষ সেবা নিতে গিয়ে তারা কোনো না কোনো ভাবে দূর্নীতির শিকার।তারপরেই রয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ৭৯.৬% তারপরে ভূমি প্রশাসন ৭২.২% সেই সাথে শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে দূর্নীতির শিকার মানুষের হার ১৫.৩% এবং ৩৫.২ %। ঘুষের ব্যাপকতা বিবেচনায় নিলে দেখা যায় ৭১.৯% পরিবার সেবা পেতে সব ধরনের সেবা খাতে ঘুষ দিয়ে থাকেন।
দূর্নীতিতে বাংলাদেশ ২০০১ থেকে ২০০৫ পর্যন্ত বরাবরের মতই ১ম স্থান ধরে রাখে। ২০০৬ সালে ৩য়,২০০৭ সালে ৮ম, ২০০৮ সালে ১০ম, ২০০৯, ২০১১ ও ২০১৫ সালে ১৩তম,২০১০ সালে ১২তম,২০১৩ সালে ১৬তম, ২০১৪ সালে ১৪তম, ২০১৬ সালে ১৫তম এবং ২০১৭ সালে ১৭তম অবস্থানে ছিল। ২০১৮ সালে বাংলাদেশের অবস্থান ১৩তম, সর্বশেষ ২০১৯ সালে ২৬তম।
এরশাদ পতনের পর বিএনপি সরকারের শাসনামলে ১৯৯১-১৯৯৬ সাল পর্যন্ত দেশে আনুমানিক দূর্নীতির পরিমাণ ছিল ৯ হাজার ৬৩৪ কোটি টাকা। এর পরে ১৯৯৬-২০০১ সাল পর্যন্ত আওয়ামিলীগের আমলে দেশে দূর্নীতির পরিমান ছিল ১৬ হাজার ৩৫৩ কোটি টাকা। আওয়ামিলীগের সময় কিভাবে টেন্ডারবাজির মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় সম্পদ আত্মসাৎ করা হয় তা আমরা “আটটি মিগ-২৯ যুদ্ধ বিমান ও একটি ফ্রিগেট কেনার দলিলে দেখতে পাই। সেগুলো সঠিক ভাবে অস্ত্র সজ্জিত ছিল না, উড্ডয়নের সময় যান্ত্রিক ত্রুটি ধরা পড়ে, পরে সেগুলো আর আকাশেই উড়তে পারেনি। এর এক একটি ফ্রিগেট কিনতে খরচ হয়েছিল সাড়ে পাঁচশত কোটি টাকা।