দুর্নীতির পৃষ্ঠপোষকদের বেলায় জিরো টলারেন্স কই?

দুর্নীতির পৃষ্ঠপোষকদের বেলায় জিরো টলারেন্স কই?
দেশে এখন আমলাদের দুর্নীতি নিয়ে বেশ শোরগোল হচ্ছে। এর আগে কিছুদিন ব্যবসায়ীদের অতি মুনাফা ও সিন্ডিকেট নিয়ে হইচই হয়েছে।

কয়েক বছর আগে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের কিছু সম্রাটের ক্যাসিনো, জুয়া ও চাঁদাবাজি সূত্রে অর্জিত অবৈধ সম্পদ নিয়েও জিরো টলারেন্সের আওয়াজ প্রতিধ্বনিত হয়েছে। তাঁরা নামে সম্রাট হলেও রাজনীতিতে ছিলেন কার্যত লাঠিয়াল। রাজনৈতিক নেতা হওয়ার প্রক্রিয়ায় ছিলেন, তখনো নেতা হয়ে ওঠেননি।

গত দেড় দশকে শেয়ারবাজারেও অন্তত বার তিনেক বড় ধরনের কারসাজিতে হা–হুতাশ শোনা গেছে। নিরীহ বিনিয়োগকারীদের সম্পদ নির্বিঘ্নে লুণ্ঠনকারীদের কিছুই হয়নি। ব্যাংকের টাকা ঋণের নামে জালিয়াতি করে আত্মসাতের কাহিনিও কম দিনের নয়।

প্রয়াত অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত সেই ২০১২ সালে হল-মার্কের চার হাজার কোটি টাকার জালিয়াতির সমালোচনার জবাবে বলেছিলেন, ‘এটা কোনো বড় অঙ্কের অর্থ নয়।’

তাঁর কথা তখন অবিশ্বাস্য মনে হলেও এখন যেসব মহা দুর্নীতির অঙ্ক বা তথ্য প্রকাশ পাচ্ছে, তাতে তাঁর সেই কথাকে ভুল বা ঠাট্টা মনে করার আর কোনো অবকাশ নেই। কেননা, এখন নিয়ম ভেঙে যেমন ব্যাংক দখল হয়, তেমনি বেনামি ঋণে হাজার হাজার কোটি টাকা বের করে নেওয়ার নতুন নতুন নজিরও তৈরি হয়।

দুর্নীতি নিয়ে যত শোরগোলই হোক, দুর্নীতিবাজদের যে খুব একটা সমস্যা হচ্ছে, তা নয়। মহা দুর্নীতির অভিযোগের পর বদলি বা পদাবনতির মতো যেসব ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে, তাতে মনে হয়, সরকার ‘পাপকে ঘৃণা করো, পাপীকে নয়’ নীতিতে বিশ্বাসী।

অপরাধীদের তাই ব্যাংক হিসাব থেকে টাকা উঠিয়ে নেওয়া বা সম্পদ জব্দের আগে তা হস্তান্তর করা ও বিদেশে পালিয়ে যাওয়ায়ও কোনো সমস্যা হয়নি। তাঁরা যদি সরকারের সমালোচক বা বিরোধী দলের কেউ হতেন, তাহলে তাঁদের বিমানবন্দরের গণ্ডি পেরোতে আদালতের কাছে মিনতি করতে হতো।

দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত আমলাদের বিচার হোক, সেটা সবাই চায়। কিন্তু বিচার হবে এবং অপরাধের জন্য তাঁদের সাজা হবে, এমন আশা ও বিশ্বাস প্রায় অনুপস্থিত। রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর দলীয়করণের কারণে তাঁরা দীর্ঘদিন ধরে রাজনৈতিক কর্তৃপক্ষ বা ক্ষমতাসীন দলের পৃষ্ঠপোষকতা ও আশীর্বাদ ভোগ করে এসেছেন বলেই এই আশঙ্কা।

সরকারের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে দমন এবং একতরফা নির্বাচন আয়োজনে প্রশাসন ও পুলিশ কর্মকর্তাদের ভূমিকার স্বীকৃতি হিসেবে বিভিন্ন পদক ও পুরস্কারেও এর প্রতিফলন ঘটেছে।

শুদ্ধাচার পুরস্কারের কথা আমরা সবাই জানি। এটি দেওয়ার কথা দুর্নীতিবিরোধী কার্যক্রমের অংশ হিসেবে। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, যিনি দুর্নীতিতে রেকর্ড গড়েছেন, তাঁকেও এ পুরস্কারে সম্মানিত করা হয়েছে।

সরকারের কথা ও কাজের বৈপরীত্যের এমন নজিরের অভাব নেই। গত ৩০ জুনের পত্রিকাগুলো দেখুন। সেদিন অনেক কাগজেই প্রথম পাতায় শিরোনাম আছে সংসদে দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রীর ব্যবস্থা নেওয়ার ঘোষণা। কিন্তু তার পাশেই অন্য খবরটি হচ্ছে, কালোটাকা সাদা করার সুযোগ বহাল। দুর্নীতি আর কর ফাঁকি ছাড়া কি কারও কাছে কালোটাকা তৈরি হয়?

Maniruzzaman

I am Maniruzzaman, a free thinker and political commentator, dedicated to unraveling the complexities of Bangladesh’s political landscape.

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button