ছাত্র আন্দোলনের শক্তি ও জীবনের মূল্য
রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ চলমান কোটা সংস্কার আন্দোলনে ১৬ জুলাই পুলিশের গুলির মুখে দুই হাত প্রসারিত করে বুক পেতে দেন। সাঈদের ধারণা ছিল, তাঁর দেশের পুলিশ নিরস্ত্র তাঁকে দশ হাত দূর থেকে গুলি করবে না। ধারণাটি ভুল ছিল, বুক ও পেট গুলিতে ঝাঁজরা হয়ে গিয়েছিল। একাধিক ভিডিও ফুটেজে স্পষ্ট দেখা যায় সেদিনের ঘটনা। হতভম্ব হয়ে যাওয়ার মতো এই পাশবিক ঘটনা দেশ-বিদেশে তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে। কোটাবিরোধী ছাত্র আন্দোলনও দেশব্যাপী তীব্র হয়ে ওঠে।
সাঈদের মরদেহের তদন্তকারী চিকিৎসক রংপুর মেডিকেল কলেজের ড. রাজিবুল ইসলাম বলেছেন, ‘আবু সাঈদের বুক ও পেট ছররা গুলিতে ঝাঁঝরা হয়ে গিয়েছিল। লুকোচুরির কিছু নেই। আভ্যন্তরিক রক্তক্ষরণে তার মৃত্যু হয়।’ (প্রথম আলো, ২৮ জুলাই ২০২৪)। তবে পুলিশ উল্টো কথা বলতে শুরু করেছে। মামলার এফআইআরে পুলিশের গুলিতে আবু সাঈদের নিহত হবার প্রসঙ্গটি উল্লেখই হয়নি। ঘটনার পরদিন তাজহাট থানায় দায়েরকৃত মামলার এজাহারে বিশ্ববিদ্যালয় পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ উল্লেখ করেছেন, বেলা ২টা ১৫ মিনিটের দিকে ছাত্র নামধারী সুবিধাভোগী রাষ্ট্রবিরোধী আন্দোলনরত দুর্বৃত্তগণ বিভিন্ন দিক থেকে বৃষ্টির মতো ইটপাটকেল ও তাদের নিকটে থাকা আগ্নেয়াস্ত্র থেকে এলোপাতাড়ি গুলি শুরু করে।
এফআইআরের বিবরণ উদ্ধৃত হয়েছে এভাবে– ‘ওই সময় পুরো বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। বিভিন্ন দিক থেকে আন্দোলনকারীদের গোলাগুলি ও ইটপাটকেল নিক্ষেপের এক পর্যায়ে একজন শিক্ষার্থীকে পড়ে থাকতে দেখা যায়। সহপাঠীরা তাকে ধরাধরি করে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কতর্ব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। মৃত ছাত্রের নাম আবু সাঈদ।’ (সমকাল, ২৭ জুলাই ২০২৪)।
দিনেদুপুরে পুলিশের জলজ্যান্ত এই উল্টোকথায় মূক ও বধির হয়ে যেতে হয়! নিরস্ত্র ছাত্র আবু সাঈদ, তাঁকে প্রকাশ্যেই গুলিতে বুক ঝাঁজরা করে দিল পুলিশ, ঘটনাটির অনুপুঙ্খ ভিডিও দেশজুড়ে প্রতিবাদের ঝড় তুলল; তার পুলিশি বিবরণ এই! তাহলে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় আন্দোলনরত ছাত্রছাত্রীদের ওপর নির্যাতনের যে তাণ্ডব আমরা দেখেছি ও জেনেছি; তার ভাষ্য কী রকম হবে তা অনুমান করা কঠিন নয়। দুই শতাধিক ছাত্র-শ্রমিক-জনতার মৃত্যুর যে অবর্ণনীয় শোক ও অন্তহীন রোদনে আজ সারাদেশ আকণ্ঠ শোকে নিমজ্জিত– তার বিহিত হবে কোথায়, কীভাবে?