ফিরে না আসুক এমন রক্তাক্ত সময়

তিন সপ্তাহের আন্দোলনে ছাত্র গণঅভ্যুত্থানে চরম ফ্যাসিস্ট শাসক হিসেবে আবির্ভূত শেখ হাসিনা সরকারের পতন হয়েছে। কোটা সংস্কার নিয়ে শিক্ষার্থীদের নিরীহ একটি আন্দোলন থেকে এই গণঅভ্যুত্থান। সেই অভ্যুত্থানে সরকারের নির্দেশে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গুলিতে নিভে যায় শত শত প্রাণ। এর বিনিময়ে অবিস্মরণীয় এক জয়ের দেখা পেয়েছে ছাত্র-জনতা। জনবিক্ষোভ দমাতে নির্বিচারে গুলি চালিয়েও শেষ রক্ষা হয়নি শেখ হাসিনার। অবশেষে গত ৫ অগাস্ট যবনিকা ঘটে সাড়ে ১৫ বছরের একচ্ছত্র শাসনের। ওইদিন দুপুরে প্রধানমন্ত্রীর পদ ছেড়ে তিনি ছোট বোন শেখ রেহানাকে নিয়ে ভারতে উড়াল দেন। এর আগেই দেশজুড়ে কোটি মানুষ পথে নেমে বিজয় উল্লাসে মাতেন; নেন গণভবনের দখল।

রংপুরের শিক্ষার্থী আবু সাঈদের আত্মত্যাগের পথ ধরে শিক্ষার্থী, শ্রমিক, মজুরসহ শত শত মানুষ শ্রাবণের ২১ দিনে চরম ফ্যাসিস্ট শাসকের বন্দুকের নলের সামনে বুকে পেতে দাঁড়ানোর নজিরবিহীন সাহস দেখান। বিরলতম এ আত্মত্যাগে বিজয়ী হয়েছে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান। জনজোয়ারে ভেসে গেছে ক্ষমতার দম্ভ। ‘অবিকল্প’ হিসেবে মিথ হয়ে ওঠা শেখ হাসিনার প্রধানমন্ত্রীত্বের সিংহাসন।

জগদ্দল পাথরের মতো দেশবাসীর বুকে চেপে বসা স্বৈরশাসনের অবসানের পর দেশবাসী উল্লাসে মেতেছে। কিন্তু রয়ে গেছে এক বিষণ্ণ অনুভূতি। কেন এমন হলো? কেন এই অগাস্ট মাসে যে দলটি জাতির স্বাধীনতা সংগ্রামে নেতৃত্ব দিয়েছিল, সেই দলটি গণরোষের শিকার হলো? কেন দলের নেতাদের পিটিয়ে-পুড়িয়ে মারা হচ্ছে? কেন দলের প্রধান নেত্রী যিনি টানা পনের বছর ধরে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন, তাকে ভীরুর মতো প্রাণ নিয়ে পালিয়ে যেতে হলো? কেন দেশের বুকে এক রক্তস্নাত ইতিহাস রচিত হলো?

এর পেছনে ছিল যেকোনো মূল্যে ক্ষমতায় থাকার উদগ্র বাসনা। ক্ষমতায় থাকার জন্য তিনি সবরকম প্রতিবাদ-আন্দোলনকে কঠোরভাবে দমন করেছেন। ভিন্নমতকে গলাটিপে বন্ধ করেছেন। চরম কর্তৃত্ববাদী শাসন কায়েম করেছেন। সবাইকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য অবজ্ঞা-অপমান করেছেন। নিজ-পরিবারকে উর্ধ্বে তুলে ধরেছেন। কেবল চালাকি আর কৌশল দিয়ে রাজনীতির মাঠে অপ্রতিদ্বন্দ্বী হতে চেয়েছেন। লুটেরা-অর্থপাচারকারীদের সহায় হয়েছেন। দাবি আদায়ের জন্য রাজপথে দাঁড়ানো শিশুদের বিরুদ্ধেও তিনি পুলিশ আর ছাত্রলীগের গুণ্ডাদের লেলিয়ে দিয়েছেন। তিনি সবসময় ক্ষমতার অন্দরমহলটাকে অন্ধকার রেখে দেশ শাসনের চেষ্টা করেছেন।

রক্ত-শ্রাবণ অনেক লাশ, রক্ত, ক্ষতি ও ক্ষতের চিহ্ন রেখে গেছে। তবু এখনো মানুষ অনেক কিছুই জানে না। গত পনের দিনে ঠিক কতজন মানুষকে হত্যা করা হয়েছে, ওই তথ্য এখনো অজানা। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কিছু কিছু ভিডিও সামনে আসছে। সেখানে দেখা যাচ্ছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের দিয়ে কী নির্মমভাবে আন্দোলনকারীদের গুলি করে হত্যা করা হয়েছে! কেন এমন নির্মমতা দেখানো হলো? সরকারের কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদ করলে কি রক্তগঙ্গা বইয়ে দিতে হয়?

Maniruzzaman

I am Maniruzzaman, a free thinker and political commentator, dedicated to unraveling the complexities of Bangladesh’s political landscape.

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button