সর্বত্রই শুধু চাটার দল
স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলেছিলেন,
‘যেদিকে তাকাই, সেদিকেই দেখি শুধু চাটার দল’।
এ ‘চাটার দল’ গত পঞ্চাশ বছরে আরও ফুলে-ফেঁপে উঠেছে। সবখানে তাদের দৌরাত্ম্য। এ ‘চাটার দলে’র কারণে আমাদের দেশে সরকারি কেনাকাটা মানেই হচ্ছে দুর্নীতির মহোৎসব। দশ টাকার জিনিস হাজার টাকা দিয়ে কেনা। আগে এ ধরনের চুরিকে বলা হতো ‘পুকুরচুরি’। এখন ‘সাগরচুরি’ বলা হচ্ছে। সরকারি কেনাকাটায় এ ‘সাগরচুরি’ কিছুতেই থামছে না। সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, দপ্তর, অধিদপ্তরের কেনাকাটার সঙ্গে যুক্ত কর্মকর্তারা বল্গাহীনভাবে দুর্নীতি করছেন পণ্য কেনাকাটায়। কোনো রকম নিয়ম না মেনে কিংবা নিয়মের ফাঁকফোকর গলিয়ে তারা নিজেদের পছন্দের ঠিকাদারদের দিয়ে বাজার মূল্যের চেয়ে উচ্চ মূল্যে কেনাকাটা করে নিজেদের পকেট ভারী করছেন।
রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে একটি বালিশ কেনায় ৬ হাজার টাকা খরচ কাগজে–কলমে দেখানো, ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের একটি পর্দা কিনতে ৩৭ লাখ টাকা ব্যয় দেখানোর ঘটনাগুলো উদঘাটনের পর ধারণা করা হয়েছিল, এ ধরনের ঘটনা হয়তো কমবে। কিন্তু আমাদের এই ‘সব সম্ভবের দেশে’ মহামারীকালেও যাবতীয় সরকারি কেনাকাাটকে মহোৎসবে পরিণত করা হয়েছে।
দুর্নীতি আগেও ছিল, কিন্তু এখন তা সীমার বাইরে চলে যাচ্ছে। লুটপাটের মানসিকতা কতটা বেপরোয়া হলে কেউ ২৫০ টাকার জিনিস ২৫ হাজার টাকায় কিনতে পারে? ভাইরাস ও ছত্রাকের আক্রমণ শনাক্তে রোগীর মস্তিষ্কের রস সংগ্রহে ব্যবহৃত বিশেষ ধরনের এক সুঁই যার প্রতিটির মূল্য ২৫০ টাকা, অথচ এ সুঁই প্রতিটি ২৫ হাজার টাকায় কিনেছে সরকারের স্বাস্থ্য বিভাগের প্রতিষ্ঠান রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরো সায়েন্সেস ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। অস্ত্রোপচারের সময় চামড়া আটকে রাখার জন্য ব্যবহৃত হয় একধরনের বিশেষ যন্ত্র, যার নাম টিস্যু ফরসেপস, ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা দামের ওই টিস্যু ফরসেপস কেনা হয়েছে প্রতিটি ২০ হাজার টাকায়। রোগীর প্রস্রাব ধরে রাখার ইউরিনারি ব্যাগের প্রতিটির বাজারমূল্য ৬০ টাকা, কিন্তু এ ব্যাগই প্রতিটি কেনা হয়েছে ১ হাজার ৩০০ টাকায়।