দুর্নীতিগ্রস্ত এই সিস্টেম কি বদলাবে?
এই শহরে এই ধরনের আগুনে নিরীহ মানুষের প্রাণহানি নতুন কোনও খবর নয়। বরং প্রতিটি ঘটনাকেই আমরা ‘দুর্ঘটনা’ বলে মেনে নিয়ে পরের ঘটনার জন্য অপেক্ষা করতে অভ্যস্ত হয়ে গেছি। সেইসঙ্গে যে মানুষগুলো পুড়ে লাশ হয়, সেটি সরকারের পরিসংখ্যানে কিছু নতুন সংখ্যাই কেবল যোগ করে। যে কারণে বা যাদের অনিয়ম-দুর্নীতি-অব্যবস্থাপনা আর গাফিলতির কারণে এই মানুষগুলোর জীবন এবং তাদের পরিবারগুলো তছনছ হয়ে যায়, তাদের জন্য কেবল রাষ্ট্রের শীর্ষ পর্যায়ের কিছু শোক, কিছু সমবেদনা, কিছু ক্ষতিপূরণ।
যে মা তার সন্তানকে হারালেন— কোটি টাকার ক্ষতিপূরণেও কি ওই মায়ের মনকে শান্ত করা যাবে? যে লোক তার মা-বাবা-স্ত্রী-সন্তানকে হারালেন, তার ক্ষতিপূরণ হবে কী করে? ‘জন্মমৃত্যু আল্লাহর হাতে’— এই সান্ত্বনার ভার বইতে হবে সারা জীবন? এখানে রাষ্ট্রের কী দায়? রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান এবং ভবনের মালিকদের অনিয়ম-দুর্নীতি ও অবহেলার জন্য যাদের মৃত্যু হলো, তারা কি হত্যার দায়ে অভিযুক্ত হবেন? তারা কি মানুষ হত্যার দায়ে শাস্তি পাবেন? পাবেন না। কেননা অতীতে এরকম ঘটনা আরও ঘটেছে।
তার ফলাফল বা পরিণতি কী হয়েছে তা দেশবাসী জানে। বরং খুব দ্রুতই আরেকটি বড় ঘটনা ঘটলে বেইলি রোডের লেলিহান আগুনের শিখা মানুষের মন থেকে ফিকে হতে থাকবে। হয়তো এর চেয়ে আরও বড় কোনও ঘটনা এই ঘটনাকে ম্লান করে দেবে। তখন আবারও টেলিভিশন চ্যানেল লাইভ হবে। সংবাদপত্রে বিশ্লেষণ প্রকাশিত হবে। সমাজের সচেতন মানুষেরা প্রতিবাদ করবেন। লিখবেন। টেলিভিশনের পর্দায় জ্বালাময়ী বক্তৃতা দেবেন। কিন্তু তারপর কী? যে দুর্নীতিগ্রস্ত সিস্টেমের কারণে বারবার এই ঘটনাগুলো ঘটছে, সেই সিস্টেম কি বদলাবে?
বলা হয়, রাজধানী ঢাকার মানুষ মূলত একটি অ্যাটম বোমার ওপরে বসবাস করে এবং এত অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা, দুর্নীতি আর বিশৃঙ্খলার ভেতরে এই শহরে বেঁচে থাকাটাই যেন এখন ‘মিরাকল’।