দুই পুত্রকে নিয়ে লুটপাটের সাম্রাজ্য গড়েন মকবুল
পাবনা-৩ আসনের চার বারের সংসদ সদস্য মো. মকবুল হোসেন। নিজ এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছিলেন। হামলা-মামলা দিয়ে প্রতিপক্ষকে করেছিলেন নাস্তানাবুদ। অস্বস্তিকর পরিবেশে ফেলে দখল বাণিজ্য ও অনৈতিকভাবে অবৈধ সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলেন। তার এই অনৈতিক কাজের সহযোগী ছিলেন দুই পুত্র সাবেক ভাঙ্গুড়া পৌর ও উপজেলা চেয়ারম্যান গোলাম হাসনাইন রাসেল এবং উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ইবনুল হাসান শাকিল। গত ৫ই আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের পর মকবুলের দুই পুত্র লাপাত্তা।
একসময় জাতীয় পার্টির নেতা ছিলেন মকবুল। সুযোগ বুঝে যোগ দেন আওয়ামী লীগে। জাপা থেকে পরপর দু’বার উপজেলা চেয়ারম্যান ছিলেন। সুবিধাবাদী এই নেতা দল বদল করে এমপি হয়েই চাটমোহর, ভাঙ্গুড়া ও ফরিদপুরে গড়ে তোলেন ত্রাসের রাজত্ব। এলাকায় কায়েম করেন নিজের আইন। চাটমোহর, ভাঙ্গুড়া ও ফরিদপুরে মানুষের কাছে ছিলেন মূর্তিমান আতঙ্ক। জাতীয় নির্বাচনে তার বিরুদ্ধে নির্বাচন করায় প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা, দোকান দখল ও বাড়ি ভাঙচুরসহ পুলিশ দিয়ে নানা হয়রানি করেন। নির্বাচন এলে তিন উপজেলায় তার আশীর্বাদপুষ্ট নেতারাই নির্বাচিত হতেন। তাদের বিরুদ্ধে কেউ দাঁড়ালে তাকে চরম মূল্য দিতে হতো।
সূত্র মতে, এক সময় বিদেশে শ্রমিকের কাজ করতেন এমপি পুত্র রাসেল। পরে নৌকার মনোনয়নে পিতা মকবুল হোসেন এমপি নির্বাচিত হলে পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বনে যান তিনি। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। পিতার আশীর্বাদে ভাঙ্গুড়া পৌরসভার মেয়র নির্বাচিত হন। পরে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হন। এদিকে বড় ভাইয়ের এমন উত্থানে বসে থাকেনি ছোট ভাই শাকিল। তিনিও এক লাফে হয়ে যান উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক। সামনে পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র পদে নির্বাচন করার কথা ছিল তার।
স্থানীয়রা জানান, গত ১৬ বছর এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছিল রাসেল-শাকিল ও তাদের কিছু আত্মীয়স্বজন। তাদের ক্ষমতার দাপটে এলাকার সকল শ্রেণি-পেশার মানুষ ছিল অসহায়। এমনকি নিজ দলের একটি অংশকে আওয়ামী লীগ থেকে বিতাড়িত করার মিশন চালায় তারা। আর বিরোধী শিবিরের নেতাকর্মীদের নামে মিথ্যা ও গায়েবি মামলা দিয়ে তাদের জেলে ভরার মূলহোতা ছিলেন তারা। তিনটি উপজেলার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নিয়োগ বাণিজ্য করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।
এ ছাড়া পশুরহাট, সাব-রেজিস্ট্রি অফিস, পৌর শহরের সিএনজি স্ট্যান্ডসহ বিভিন্ন জায়গা থেকে আদায় করতেন লাখ লাখ টাকা। দরবার-সালিশের নামে অসহায় মানুষের কাছ থেকে আদায় করা হতো মোটা অঙ্কের টাকা। আর তাদের এসব কাজের বুদ্ধিদাতা ও প্রধান সহযোগী হিসেবে সহযোগী কাজ করেছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি অধ্যক্ষ সাইদুল ইসলাম ও উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ইমরান হাসান আরিফ। সাইদুল ও আরিফ দু’জনেই এমপি মকবুলের আস্থাভাজন হওয়ায় কোটি কোটি টাকা কামিয়েছেন তারা। আরিফ এখনো আত্মগোপনে থাকলেও সমপ্রতি এলাকায় ফিরেছেন সাইদুল ইসলাম। এমপি’র খুব আস্থাভাজন হওয়ায় তিনি স্থানীয় বিবি স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ পদে চাকরি বাগিয়ে নেন। এদিকে এমপিপুত্র রাসেল-শাকিল ও আওয়ামী লীগ নেতা আরিফসহ ৭-৮ জনের বিরুদ্ধে অপহরণ, চাঁদাবাজি ও নির্যাতনের অভিযোগে আদালতে মামলা হয়েছে।