বাংলাদেশের ‘কান্ট্রি ব্রান্ডিং’ হবে ধর্ষণ আর বিচারহীনতার দেশ হিসেবে

খাজা রহমান ভাই লিখেছেন, একটা দেশ-জাতি-মানচিত্র কিভাবে ধর্ষিত হয়, জানেন? রাষ্ট্র যখন অপরাধগুলো বিচারহীন ফেলে রাখে, রাজনৈতিক রং দেখে ঘটনা ধামাচাপা দেয়, যখন ফাঁসির আসামীদেরকেও ‘মৃদু বকে দিয়ে’ রাস্ট্রীয় ক্ষমা ঘোষণা করা হয়, যখন বর্বরতার খবরগুলো ছবিসহ বিদেশী সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ হয়ে পড়ে।

বছর কয়েক আগে ভারতীয় এক ছাত্র ইন্টার্নশিপের সুযোগ চেয়ে ই-মেইল করলে জার্মানির এক অধ্যাপক ম্যাডাম আবেদনটি প্রত্যাখ্যান করে লিখেছিলেন, “দুর্ভাগ্যবশত আমি কোনো ভারতীয় ছাত্রকে এই ইন্টার্নশিপের জন্য মনোনীত করবো না। ভারতের ‘ধর্ষণ সমস্যা’ নিয়ে আমরা অনেক শুনেছি, যা সমর্থনযোগ্য নয়। আমার রিসার্চ গ্রুপে অনেক ছাত্রী কাজ করে এবং একই আচরণ আমার গ্রুপেও হবার সম্ভাবনা থাকুক তা কাম্য নয়।“

সব ভারতীয়কে কেন এক কাতারে ফেলা হচ্ছে? – ছেলেটির এমন অভিযোগের জবাবে অধ্যাপক লিখেছিলেন, “এটা ঠিক যে কোনো একক ব্যাক্তির উপর এটা প্রযোজ্য হওয়া বা সবাইকে এক কাতারে ফেলা উচিত নয়, কিন্তু এটা অবিশ্বাস্য যে কেন ভারতীয় সমাজ কয়েক বছরেও এই সমস্যার সমাধান করতে পারছে না! সাম্প্রতিক গ্যাং-রেইপ গুলোই প্রমাণ করে যে নারীদের প্রতি সমগ্র ভারতের আচরণ কেমন এবং এর তীব্র প্রতিবাদ করতেই আমার এই প্রত্যাখ্যান“। (সূত্র: হাফিংটন পোস্ট, গুগল করে দেখতে পারেন)।
বিষয়টা দিল্লিতে নিযুক্ত জার্মান রাষ্ট্রদূত পর্যন্ত গড়ায় এবং বিতর্কিত এই সিদ্ধান্তের জন্য অধ্যাপক পরে ক্ষমাও চান, কিন্তু ততক্ষণে বিশ্বমিডিয়া জুড়ে ভারত নামক দেশটির ক্ষতি যা হবার হয়ে গেছে। ট্রেনে-বাসে গণধর্ষণ ছাড়াও মেয়ে ভ্রুন মেরে ফেলা, যৌতুকের কারনে আত্মহত্যা, অর্থাভাবে লাশ কাঁধে নিয়ে দৌড়ানো – ইন্টারনেটের যুগে এখন আর কিছুই চাপা থাকে না।

তবে ভারতীয়রা কিন্তু কলঙ্কগুলো মুছতে আপ্রাণ চেষ্টা করছে। সাম্প্রতিক আলোচিত নির্ভয়া ধর্ষণের ঘটনায় পুরো দেশ এক হয়ে প্রতিবাদ করেছিল এবং বিচারে আসামীদের মৃত্যুদন্ড কার্যকর হয়েছে। সেখানে টাকার কুমির বলিউডের খানও চিত্রল হরিণ মেরে আদালতে দৌড়ের উপরে থাকে, অস্ত্র-মামলায় ৫ বছর জেল খাটে আরেক বলিউড তারকা, জনপ্রিয় ‘আম্মা’ উপাধির ৬ বারের মুখ্যমন্ত্রীকে দুর্নীতির অভিযোগে সংসদ চলাকালে গ্রেফতার করে গোয়েন্দা পুলিশ। আর বাংলাদেশে আপন জুয়েলার্সের মালিকের ছেলে বা এমপির ছেলে ধর্ষণ করলে, ক্যান্টনমেন্টের মধ্যে বা পাহাড়ে ধর্ষণ হলে সেটা হালাল হয়ে হিমঘরে চলে যায়!!
“একটা সমাজ কতোটুকু সভ্য তা জানতে চাইলে দেখুন তারা নারীদের সাথে কেমন আচরণ করে” – উক্তিটি পশতুন আন্দোলনের অহিংস নেতা খান আব্দুল গাফফার খানের।
বাংলাদেশে বেড়ে উঠা যে কোনো মেয়ের অভিজ্ঞতা শুনে দেখতে পারেন ছোটবেলা থেকে স্কুল, মাদ্রাসা, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, অফিস-আদালত পাড়ি দিতে তাকে প্রতিটি দিন কতোটা সংগ্রাম আর আতঙ্কের মধ্যে দিয়ে চলতে হয়েছে, শুধুমাত্র সম্ভাব্য ধর্ষকদের দ্বারা মানসিক ও শারীরিক ধর্ষণের হাত থেকে নিজেকে রক্ষা করতে। নিজের মা, বোন, বান্ধবী বা স্ত্রীর কাছ থেকে শুনুন বা তাদের সাথে কখনও শপিং মল, পার্ক, রেস্তোরাঁয় গিয়ে থাকলে আপনিও অনেক বিব্রতকর ঘটনার সাক্ষী নিশ্চিত!

এবার সেই মেয়েটির কাছ থেকে শুনুন যে দেশের বাইরে কোনো একটি সভ্য দেশে রাত ৩ টার সময় রিসার্চ ল্যাব থেকে ঘরে ফেরে বা জীবনের প্রয়োজনে কাজ করতে যায়। পার্থক্যটা তারাই সবথেকে ভালো ধরতে পারবে, বলতে পারবে।
যেই সমাজে দেশি, বিদেশী, আদিবাসী, পাহাড়ি, অনাবাসীসহ যে কোনো নাগরিক দিনে বা রাতে বাড়ির বাইরে যেতে বা নিরাপদে ফিরে আসতে আতঙ্কবোধ করে, যেই সমাজ এই নিরাপত্তাটুকু দিতে ব্যর্থ, বিচার করতে ব্যর্থ, সেটি কি একটি সভ্য সমাজ? ধর্ষণ তো আর আকাশ থেকে এলিয়েন নেমে এসে করে না!!

বছরের ৯ মাসে ১,১০০ ধর্ষণ, তাও করোনার মধ্যেই!!?? এভাবে চললে অচিরেই বিশ্বে বাংলাদেশের ‘কান্ট্রি ব্রান্ডিং’ হবে ধর্ষণ আর বিচারহীনতার দেশ হিসেবে, লঞ্চডুবি, ফেইক করোনা-সার্টিফিকেট, রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব ও পাসপোর্ট বানানোর দেশ, সাংসদ কর্তৃক কুয়েতে মানবপাচারের দেশ, বিনাবিচারে ক্রসফায়ারের দেশ, শতকোটি টাকার গাড়িচালকদের দেশ.. কয়টা বলবো? একটা মানচিত্রকে ধর্ষণ করতে কয়টা উদাহরণ লাগে?

আপনি পদ্মা সেতু, হাই-জিডিপি, হাই-রিজার্ভ দিয়ে কি করবেন? ফ্ল্যাগ উড়াবেন? রাস্তার মোড়ে মোড়ে মসজিদ-মন্দির নির্মাণ করেও সমাজ কেন অসভ্য হলো? মুক্তিযোদ্ধারা লুঙ্গি-গামছা পরে ৯ মাস যুদ্ধ করেছিল এই দেশ দেখার আশায়?
যার হারায়, শুধু সেই বোঝে আর যাদের লজ্জা আছে, শুধু তারাই দেশে-প্রবাসে লজ্জিত হয়!!

Maniruzzaman

I am Maniruzzaman, a free thinker and political commentator, dedicated to unraveling the complexities of Bangladesh’s political landscape.

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button