জয় হোক মুক্তিযুদ্ধের স্বপ্ন গণতন্ত্রের

১৯৭৮ সনে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল- বিএনপির জন্ম হয়েছিল। সদ্য বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান প্রথম পৃষ্ঠার পর তারেক জিয়ার ভবিষ্যৎ বিএনপির ভবিষ্যতের সঙ্গে গ্রথিত। আওয়ামী লীগকে নকল করে বিএনপির কোনো লাভ হবে না।
বিএনপিকে নিজস্ব ধারাকে সাহসের সঙ্গে অক্ষুণ্ন রাখতে হবে। ছোট-বড় সকল দেশপ্রেমিক রাজনৈতিক দলকে সঙ্গে নিয়ে মুত্তিযুদ্ধের তিন মূল আদর্শকে সামনে রেখে অগ্রসর হতে হবে। মুক্তিযুদ্ধের তিন মূল আদর্শ হচ্ছে- গণতন্ত্র, ন্যায় বিচার এবং সাম্য।

রাষ্ট্রে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে হলে আগে দলে এবং দলের সকল শাখায় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে। পরিবারতন্ত্র পরিহার করতে হবে। তবে নিজগুণে পরিবারের সকল সদস্যের একই ধারার রাজনীতি করার অধিকার কোনো অন্যায্য বিষয় নয়।

এটা সর্বজনবিদিত যে, বিএনপির সবচেয়ে নন্দিত নেতা হচ্ছেন বেগম খালেদা জিয়া এবং তারেক জিয়া। তারাই এখন বিএনপির সবচেয়ে প্রিয় নেতা। তারাই শত সহস্র ভোট বেশি পেয়ে দলের যে কোনো পদে নির্বাচিত হবেন এবং সুষ্ঠু নির্বাচন হলে তাদের নেতৃত্বে দলকে জয়যুক্ত করার সম্ভাবনা সমধিক যদি তারা জনগণের চাওয়া-পাওয়াকে গ্রাহ্য করেন।

বিএনপির নির্বাচিত কমিশন ছিল বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশনের ন্যায় একটি অথর্ব, ‘জি হুজুর’ বয়োবৃদ্ধ নিজস্ব চিন্তাবিহীন, দন্তবিহীন কমিটি। যেখানে কাউন্সিলের মিটিং হচ্ছে, যেখানে ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবের ভাগ্য নির্ধারিত হবে, সেখানে কেন একই সঙ্গে বিএনপির চেয়ারপারসন ও ভাইস চেয়ারপারসন পদের নির্বাচন করা হলো না। এই প্রশ্নের উত্তর ‘বীরের মত’ ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন মহোদয়কে দিতে হবে।

আওয়ামী লীগে যেমন সকল ক্ষমতা শেখ হাসিনা ওয়াজেদের উপর সমর্পণ করা হয়েছে ঠিক তেমনি বিএনপিতেও সকল ক্ষমতা খালেদা জিয়ার উপর অর্পণ করা হয়েছে। সঙ্গে বিনা আলোচনায় তড়িঘড়ি করে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যানের ক্ষমতা বৃদ্ধির মহোৎসব চলছে।

কাউন্সিল অধিবেশনের আগে চেয়ারপারসন ও সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যানের নির্বাচনের যুক্তি দাঁড় করানোর গুজব ছড়ানো হয়েছে যে, সরকার শেষ মুহূর্তে বিএনপি কাউন্সিল বানচাল করে দিতে পারে। এমনকি আজগুবি পদ্ধতিতে খালেদা জিয়াকে জেলে পাঠাতে পারে। দল ও সংবিধান রক্ষার নিমিত্তে এই তড়িঘড়ি নির্বাচন।

জমিরউদ্দিন সাহেব, শুরুতেই কেন আপনি খালেদা জিয়াকে ভুল পথে চালিত করলেন? এটা করেছেন কি স্থায়ী কমিটিতে আপনার পদপ্রাপ্তি নিশ্চিত করার জন্য!

বিএনপির ভবিষ্যৎ চিন্তা করতে হলে, দেশের সার্বিক রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক অবস্থা ও দুর্নীতির বিষয়টি বিবেচনায় নিতে হবে। বিএনপির ষষ্ঠ জাতীয় সম্মেলন ও কাউন্সিল লগ্নে সুন্দর স্লোগান দিয়েছেন, ‘দুর্নীতি দুঃশাসন হবেই শেষ, গণতন্ত্রের বাংলাদেশ।’
কিভাবে এই স্লোগান কার্যকর করবেন দেশবাসী তা শুনতে চায়, জানতে চায়… কি করণীয়? কি ঘোষণা দিয়ে প্রস্তুতি নিলে জনগণ বিএনপির সঙ্গে রাস্তায় নামবে?

১) প্রথমে ঠিক করুন আপনাদের দলের গঠনতন্ত্র। কি আশ্চর্য, যে নেতা শারীরিক কারণে বছরে সাড়ে এগার মাস হাসপাতালে থাকেন, তাকে দায়িত্ব দিয়েছেন, বয়োবৃদ্ধ চলত শক্তিবিহীন অপর ৩২ জনকে সঙ্গে নিয়ে বিএনপি গঠনতন্ত্র পরিবর্তনের সুপারিশ প্রণয়নের জন্য। বিএনপি সংবিধানের পৃষ্ঠা সংখ্যা কত?
উচিত ছিল, রাষ্ট্রবিজ্ঞানী এমাজউদ্দীন, রশীদুজ্জামান, রওনক জাহান, দিলারা চৌধুরী, আইনের অধ্যাপক আসিফ নজরুল, বোরহান আহমদ, অধ্যাপক মাহবুবুল্লাহ প্রমুখকে প্রাথমিক সুপারিশমালা তৈরির দায়িত্ব প্রদান। তারা ৭ দিনের মধ্যে পরীক্ষা করে সুপারিশ করতেন, কাউন্সিল সদস্যরা তা পরীক্ষা করে চূড়ান্ত করতেন।
আধুনিক চিন্তাধারাকে আপনাদের গণতন্ত্রে অন্তর্ভুক্ত করতে শিখুন। কোনো কমিটিতে ১/৩ অংশের অধিক বয়োজ্যেষ্ঠদের রাখা অনুচিত। দেশে বর্তমানে ৬০ বছরের অধিক বয়সীদের সংখ্যা শতকরা ১৫% অনধিক। কমিটির ১/৩ হবে তরুণরা এবং অপর তৃতীয়াংশ হবেন মহিলারা।
সর্বক্ষেত্রে গোপন ব্যালটে নির্বাচন প্রক্রিয়া বহাল থাকা বাঞ্ছনীয়। মিলেমিশে কমিটি গঠন খাটের নিচে ময়লা লুকিয়ে রাখার মত। ছাত্রদলে ২৭ বছরের ঊর্ধ্বের কোনো ছাত্রকে নেতৃত্বে আনা ভুল সিদ্ধান্ত।
অধিক বয়সী ছাত্ররা নানা টেন্ডার ও দুর্নীতিতে সহজে জড়িয়ে পড়ে। নিদেন পক্ষে প্রতিবছর একশ’ টাকা চাঁদা দিয়ে যারা বিএনপির সদস্য হবেন, তারা নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন। উড়ে এসে জুড়ে বসার নিয়ম বাদ দিতে হবে।
২) দলের চেয়ারপারসনের মনোনয়ন দেবার ক্ষমতা ১০% মধ্যে সীমিত হওয়া শোভনীয়। এতে দলপ্রধানের বা তার সন্তানের ক্ষমতা কমবে না। দলের ভবিষ্যতের উপর তারেক জিয়ার ভবিষ্যৎ নির্ভরশীল।
৩) প্রতিবছর ইউনিয়ন, উপজেলা, জেলা ও নগর কমিটির বার্ষিক অধিবেশন হলে দলে গণতন্ত্রের ভিত্তি সুদৃঢ় হবে। কেন্দ্রীয় কাউন্সিল মিটিং এর সময় কেন্দ্রের নির্বাচন প্রতি চারবছর পরপর হওয়া বাঞ্ছনীয়। তবে বাৎসরিক মিটিং করা অবশ্য কর্তব্য।
৪) কাউন্সিল অধিবেশনের শুরুতে শেখ মুজিবুর রহমান, তাজউদ্দিন আহমদ, সৈয়দ নজরুল ইসলাম, কামরুজ্জমান, মনসুর আলী, মওলানা ভাসানী, জিয়াউর রহমান, আতাউল গণি ওসমানী, কাজী নুরুজ্জামান ও অন্যান্য সকল সেকটর কমান্ডার এবং প্রয়াত সকল মুক্তিযোদ্ধাদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করতে আশা করি ভুলবেন না।
৫) ঘোষণা দিন, আপনাদের দলের এবং অন্যান্য রাজনৈতিক দলের আটককৃত নেতাদের মুক্তির জন্য আপনারা দৃশ্যমানভাবে সচেষ্ট হবেন এবং বিচারে সার্বিক সহযোগিতা দেবেন। আপনাদের দলের আইনজ্ঞরা আটক ব্যক্তিদের কাছ থেকে কোনো ফি নেবেন না, বরঞ্চ কোর্টের বিবিধ খরচও তারা বহন করবেন। কারণ অ্যাডভোকেট সাহেবদের এই সামর্থ্য আছে।
৬) আজকের ক্ষমতাসীনদের নিশ্চিত করুন যে, বিএনপি ও তাদের সহযোগীরা ক্ষমতায় এলে তারা আওয়ামী লীগ ও ১৪ দলের রাজনৈতিক কর্মীর বিরুদ্ধে কোনোরূপ হয়রানিমূলক মামলা দায়ের করবেন না। পুলিশদের নির্দেশ দেন তারা যেন এখন থেকে ভালো হয়ে যায়।
রাজনৈতিক কর্মীদের ভয় দেখিয়ে ঘুষ বাণিজ্য অনতিবিলম্বে বন্ধ রাখে, সঙ্গে সঙ্গে ফুটপাতের ছোট ছোট দোকানিদের নিকট থেকে দৈনিক ও সাপ্তাহিক চাঁদা উঠানো বন্ধ করে নতুবা তাদের বিরুদ্ধে সকল প্রকার শাস্তিমূলক আইনসঙ্গত ব্যবস্থা নেয়া হবে এবং অন্যায়ভাবে অর্জিত সম্পত্তি বাজেয়াপ্তের জন্য প্রয়োজনীয় আইন প্রণয়ন করা হবে।
৭) অজ্ঞাতনামা আসামির তালিকাতে অন্তর্ভুক্ত করার ভয়কে কর্মীদের অগ্রাহ্য করতে বলুন। পুলিশেকে ঘুষ না দিয়ে বরঞ্চ জেলে যাক, আপনারা তাদের মুক্ত করে আনবেন।
৮) কোনো রাজনৈতিক কর্মীকে রাজনৈতিক কার্যকলাপের জন্য দুই মাসের বেশি সময় আটকে রাখা যাবে না, হয় জামিন দিয়ে তার বিচার শুরু করতে হবে নতুবা খালাস দিতে হবে।
৯) একমাসের মধ্যে অজ্ঞাতনামা অভিযুক্ত ব্যক্তিদের তালিকা সম্পন্ন করে পুলিশকে কোর্টে জমা দিতে হবে। পরে অন্য কোনো নাম যুক্ত করা আইনসিদ্ধ হবে না।
১০) এসব লক্ষ্য অর্জন করার জন্য নিরপেক্ষ স্বাধীন বিচার ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। দলীয় বিবেচনায় বিচারক নিয়োগ দেয়া হবে না। নিয়োগ প্রাক্কালে বিচারপতির সকল সম্পদের বিবরণ প্রকাশ করতে হবে যাতে জনসাধারণ বিচারপতির জীবনধারণ লক্ষ্য রাখতে পারেন।
১১) সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলে সুশীল সমাজের দু’জন প্রতিনিধিকে অন্তর্ভুক্ত করলে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের গুরুত্ব বাড়বে।
১২) দেশের গণতন্ত্রের সুষ্ঠ বিকাশের লক্ষ্যে দুর্নীতি কমানো প্রয়োজন। দেশের সকল আমলা, রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী, বিচারপতি-বিচারক, পেশাজীবী সকল ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার ও শিক্ষকদের আয়কর রিটার্ন প্রকাশ্য করতে হবে যাতে সকল জনসাধারণ তা পরীক্ষা করে দেখতে পারে।
নিম্ন থেকে উচ্চপর্যায়ের সকল সরকারি পদে নিযুক্ত ব্যক্তিদের নিযুক্তি সময়কালীন নিজস্ব, পৈতৃক ও শ্বশুরবাড়ির সম্পদের হিসাব জন প্রশাসন বিভাগে জমা দেবেন, যা প্রকাশ করা হবে স্থানীয় জনগণের নিরীক্ষণের জন্য। সাধারণ জনগণের জীবনযাত্রার উন্নয়নের জন্য বিএনপি কি কি নিশ্চয়তা দেবেন?
১) বাংলাদেশ ২৭ বিলিয়ন ডলার রিজার্ভের বুনিয়াদ সৃষ্টিতে বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নর আতিউর রহমানের কোনো অবদান নাই। ভিত্তি সৃষ্টি করেছে গার্মেন্টস শিল্পের কর্মরত চল্লিশ লাখ (মূলত: মহিলা) শ্রমিক। মরুভূমির দেশে পরিবার-পরিজনবিহীন একাকী কর্মরত প্রবাসী বাংলাদেশি শ্রমিকরা তাদের অর্জিত পুরো অর্থ দেশে পাঠিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ স্ফীত করেছেন। খাদ্যে নিরাপত্তা এনেছেন বাংলাদেশের কৃষক-কৃষাণীরা। আন্তর্জাতিক পুরস্কার পেয়েছেন অন্যরা।
২) ঘোষণা দিন, আপনারা শ্রমিকের মাসিক দশ হাজার টাকা বেতন নিশ্চিত করবেন। তৎসঙ্গে সামরিক ও পুলিশ বাহিনীর দরে শ্রমিকরা পাবেন প্রতিমাসে চাল, ডাল, তেল ও চিনির রেশন।
বার্ষিক দুই হাজার টাকায় স্বাস্থ্যবীমার বদৌলতে সকল কৃষক-শ্রমিক পাবেন পরিপূর্ণ সুবিধা, সকল রোগ নির্ণয়, হাসপাতালে ভর্তি এবং অপারেশনসমূহ ফ্রি। রোগী কেবল নিজের খাওয়া খরচ ও ওষুধের ২৫% মূল্য পরিশোধ করবেন।
৩) সকল গৃহকর্মীকে নিবন্ধনের আওতায় এনে তাদের খাওয়া দাওয়ার সাথে ন্যূনতম মাসিক চার হাজার টাকা বেতন নিশ্চিত করবেন ।
৪) জনসাধারণের স্বাস্থ্যব্যবস্থা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে প্রথমে বড় বড় শহরে এবং সকল জেলা উপজেলায় এমবিবিএস ও বিডিএস ডেন্টাল সার্জন দ্বারা জেনারেল প্র্যাকটিশনার্স (জিপি) পদ্ধতি চালু করা হবে। তারা সকল প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরিচর্যা নিশ্চিত করবেন প্রয়োজনে জেলা ও উচ্চতর স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানে রেফার করে নিখরচায় ভর্তি, চিকিৎসা ও অপারেশনের ব্যবস্থা করে দেবেন।
৫) ৬০ বছরের বেশি বয়সীদের ব্যথা-বেদনা, আর্থ্রাইটিস এবং একাকীত্ব ও বিষণœতা নিরসনের জন্য প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করবেন।
৬) ১৯৯৪ সনে বেগম খালেদা জিয়া আজকালকার দরবেশ সালমান এফ. রহমানের প্ররোচনায় বিদেশে ওষুধ রপ্তানির লক্ষ্যে ১৯৮২ সনের জাতীয় ওষুধ নীতি অনুযায়ী সরকার কর্তৃক সকল ওষুধের মূল্য নির্ধারণ স্থগিত করায় ওষুধের দর হয়েছে আকাশচুম্বী এতে অবশ্য বর্তমান সরকারের প্রত্যক্ষ মদত রয়েছে।
৭) সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে বিএনপি ক্ষমতায় এলে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা নির্বাচিত ৪০৬টি ওষুধের মূল্য সরকার কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত হবে। তাতে ওষুধের মূল্য অর্ধেকের চেয়ে কম হবে।
৮) ওষুধ প্রশাসনের কোনো কমিটিতে কোনো ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাকে সদস্য করা হবে না। এটা বাংলাদেশের মেডিকেল এসোসিয়েশনেরও দাবি। কেবলমাত্র গবেষক, শিক্ষক, বৈজ্ঞানিক ও ক্রেতা স্বার্থ সংরক্ষণ সংস্থার মনোনীত ব্যক্তিরা ওষুধ নির্বাচন ও মূল্য নির্ধারণ কমিটির সদস্য হবেন।
৯) প্রত্যন্ত অঞ্চল এবং গ্রামের মানুষের চিকিৎসা সুবিধা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সকল নবীন চিকিৎসকরা ইউনিয়ন হেলথ ও ফ্যামিলি ওয়েলফেয়ার সেন্টারে সার্বক্ষণিকভাবে তিন বৎসর অবস্থান করে স্বাস্থ্যসেবা দেয়া বাধ্যতামূলক করা হবে। না দিলে কোনো ডাক্তার পোস্ট গ্র্যাজুয়েট কোর্সে ভর্তি হতে পারবেন না। যে সব নবীন ডাক্তার গ্রামে থেকে জনসাধারণের সেবা দিচ্ছেন তাদেরকে ডিঙিয়ে কেউ যেন পোস্ট গ্র্যাজুয়েট কোর্সে ভর্তি হতে না পারে, তজ্জন্য দ্রুত আইন প্রণয়ন করা হবে।
১০) ধূমপান ও পানসেবন স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর বিধায় জনসাধারণকে আসক্তি থেকে নিবারণের জন্য এসব ক্ষতিকর দ্রব্যে শুল্ক অনেকগুণ বাড়ানো হবে, যাতে জনসাধারণ বুঝতে পারে এক কাঠি সিগারেটের মূল্যে এক কাপ চা ও একটি বনরুটি খাওয়া শ্রেয় ও বুদ্ধিমানের কাজ।
১১) শিক্ষা ছাড়া দরিদ্রতা থেকে মুক্তি সহজ নয়। সবার জন্য শিক্ষা নিশ্চিত করার জন্য প্রাথমিক অবস্থায় প্রত্যেক উপজেলায় ক্যাডেট কলেজতুল্য ভাল মানের একটি করে সরকারি হাইস্কুল প্রতিষ্ঠা করা হবে। শিক্ষকদের মান মর্যাদা বাড়ানোর লক্ষ্যে কেবলমাত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের জন্য নয়, সকল প্রাইমারি, মাধ্যমিক, কলেজ ও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করে প্রাইভেট পড়ানো বন্ধ করার সঙ্গে সঙ্গে কোচিং সেন্টারসমূহ বন্ধ করার জন্য স্বতন্ত্র উচ্চ পর্যায়ের শিক্ষা কমিশন স্থাপন করা হবে।
১২) মানবতা বিরোধী অপরাধীদের সুষ্ঠু বিচার অব্যাহত রাখা হবে। অপরাধীরা চাইলে বিদেশের আইন বিশেষজ্ঞদের সহায়তা নিতে পারবেন। তুরিন আফরোজ, পান্না দাশগুপ্ত ও অন্যান্য প্রসিকিউটরদের দক্ষতা নিয়ে যে প্রশ্ন উঠেছে, সে সম্পর্কে বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশন স্থাপন করা হবে।
১৩) বেশি দুর্নীতি হচ্ছে বিদ্যুৎ উৎপাদন ও মেগা প্রজেক্টে। অতীতে প্রতি কিলোওয়াট ঘণ্টা বিদ্যুৎ উৎপাদনে খরচ হতো ৬ টাকা ২৭ পয়সা। বিবিয়ানা-২ চালু হওয়ার পর প্রতি কিলোওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন খরচ আরও কমে ৫ টাকা ৮০ পয়সা হয়েছে। তেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে ব্যবহৃত জ্বালানি অর্থাৎ ফার্নেস ও ডিজেল খরচ সমন্বয় করা হলে বিদ্যুৎ উৎপাদন খরচ আরও কম হবে।
মজার ব্যাপার হচ্ছে- হাসিনা সরকারেরর স্নেহধারায় সিক্ত পাঁচটি রেন্টাল কোম্পানি ২৫ টাকার বেশি দরে প্রতি কিলোওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ করছে সরকারকে। এসব অনৈতিক লেনদেন পরীক্ষার জন্য বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশন গঠন করে এক বছরের মধ্যে সকল অপরাধীকে আইনের আওতায় নেয়া হবে।
১৪) জনগণের স্বার্থে বিদেশী রাষ্ট্রের সাথে প্রণীত সকল অসমচুক্তির পুনঃ মূল্যায়ন করা হবে।
১৫) বাংলাদেশের ভিতর দিয়ে বাহিত ট্রান্সজিট চার্জ প্রতি কিলোগ্রামে ১৩ পয়সার পরিবর্তে ন্যাশন্যাল বোর্ড অব রেভিনিউ ধার্য দর প্রয়োগ নিশ্চিত করা হবে ।
১৬) রামপালে বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন বন্ধ করে দিয়ে সুন্দরবন রক্ষার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করুন।
১৭) গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে স্থানীয় শাসনের বিস্তার ঘটালে জনগণের সহজ সুন্দর জীবন যাত্রা নিশ্চিত হবে। স্থানীয় শাসনের বিস্তারের জন্য সারা বাংলাদেশে ৪ বা ৮টি প্রদেশে স্থাপনের বিষয়টি ব্যাপকভাবে আলোচনা করে দেখবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিন।

আপনাদের উদ্দ্যেশ্য মহৎ হলে জনগণ আপনাদের সঙ্গে থাকবে। জয় হোক মুক্তিযুদ্ধের স্বপ্ন গণতন্ত্রের।

জাফরুল্লাহ চৌধুরী, ট্রাস্টি, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র

Maniruzzaman

I am Maniruzzaman, a free thinker and political commentator, dedicated to unraveling the complexities of Bangladesh’s political landscape.

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button